একনি, ব্ল্যাকহেডস অথবা র্যাশ এর মত স্কিন প্রবলেম গুলো হয়তো ডেইলি স্কিন কেয়ারে কমানো সম্ভব। কিন্তু স্কিনের গভীর থেকে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়, সে সমস্যা গুলো থেকে রেহাই পেতে আমাদের বেশ খানিকটা বেগ পেতে হয় । পিগমেন্টেশন বা হাইপারপিগমেন্টেশন তেমনই একটি সমস্যা।
পিগমেন্টেশন কি, পিগমেন্টেশন হওয়ার কারণ, স্কিনের কোন কোন প্রবলেম গুলো পিগমেন্টেশন এর মধ্যে পড়ে এই বিষয়গুলো অনেকেই জানে না। তাই তাদের মধ্যে প্রায়ই এসব নিয়ে কনফিউশন দেখা যায়।
আজকের ব্লগে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছি।
পিগমেন্টেশন
অনেক সময় দেখা যায় আমাদের ফেস ও শরীরের কিছু অংশের রং বদলাতে শুরু করে। ত্বকের এই রং পরিবর্তনই হল পিগমেন্টেশন। পিগমেন্টেশন সাধারণত মেলানিন নামক পিগমেন্টের অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক উৎপাদনের কারণে হয়। ত্বক, চুল ও চোখের রং নির্ধারণ করে এই মেলানিন। অতিরিক্ত পরিমাণে মেলানিন তৈরি হলে তা স্কিনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এর প্রভাবে ত্বকের বিবর্ণতা দেখা যায়।
পিগমেন্টেশন এর কারণ
অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কিছু কারণে ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে স্কিনে পিগন্টেশনের সমস্যা দেখা যায়।
বাহ্যিক কারণ
১। সূর্যের আলো
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বকে মেলানিন উৎপাদন বৃদ্ধি করে। ফলে হাইপারপিগমেন্টেশন এর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২। বিউটি প্রোডাক্ট
অনেক ধরনের বিউটি প্রোডাক্ট আছে যা স্কিনের সেনসিটিভিটি বাড়িয়ে দেয়। তাই খুব কম সময়ের জন্য সূর্যের আলোতে থাকলেও স্কিনে পিগমেন্টেশন হতে পারে।
৩। পরিবেশগত কারণ
প্রকৃতিতে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা ত্বকে পিগমেন্টেশনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া বায়ু দূষণের কারণে বর্তমানে অধিকাংশ মানুষের এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
৪। আঘাত
ত্বকে কোন প্রকার আঘাত লাগলে বা রক্ত জমাট বাঁধলে, স্কিনে জ্বালাপোড়া বা একজিমা থাকলে তা মেলানিন উৎপাদন বৃদ্ধি করে পিগমেন্টেশনের কারণ হতে পারে।
অভ্যন্তরীণ কারণ
১। জিনগত কারণ
জিনগত কারণ পিগমেন্টেশনের ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। অনেকেরই বংশগত কারণে ত্বকে পিগমেন্টেশনের প্রবণতা দেখা যায়।
২। গর্ভাবস্থা
অনেক সময় দেখা যায় গর্ভাবস্থায় মেয়েদের ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যা মেলানিন উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে। ফলে দেখা যায় এই মেলানিন বৃদ্ধির কারণে মুখে, ঘাড়ে ও পেটে দাগ তৈরি হয়।
৩। থাইরয়েডের সমস্যা
হাইপোথাইরয়েডিজম থাকা ব্যক্তিদের ত্বকে পিগমেন্টেশন হতে দেখা যায়।
পিগমেন্টেশনের ধরণ
ত্বকে বিভিন্ন ধরনের পিগমেন্টেশন দেখা যায়। এর মধ্যে যে ৪ ধরনের পিগমেন্টেশন সব থেকে বেশি দেখা যায় সেগুলো হলঃ
১। ফ্রিকেলস
মুখে অনেক সময় ছোট গোলাকার বিন্দু দেখা যায়, এগুলোকেই বলা হয় ফ্রিকেলস। এটি সাধারণত সূর্যালোকের ক্ষতিকর প্রভাবে হয়ে থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রে এটি বংশগত কারণেও হয়ে থাকে।
২। মেসতা বা মেলাজমা
মেসতা এক ধরনের পিগমেন্টেশন যা সাধারণত মেয়েদের ফেস এ বেশি দেখা যায়। মেসতা হল বাদামী থেকে ছাই রঙের ছোপ ছোপ যা সাধারণত গালে, নাকে বা চোয়ালের ধারে দেখা যায়।
৩। সানস্পট
আমাদের ফেস ও শরীরের যে সকল জায়গা উন্মুক্ত থাকে সেসব জায়গায় সান এক্সপোজার এর কারণে ছোট ছোট স্পট তৈরি হয়। এগুলো সানস্পট বা লিভারস্পট নামে পরিচিত। এই দাগের পরিমাণ ও তীব্রতা আলট্রা ভায়োলেট (UV) রে, ত্বকের মেলানিনের উপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে তার উপর নির্ভর করে।
৪। প্রদাহ-পরবর্তী পিগমেন্টেশন
পোস্ট-ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহ-পরবর্তী হাইপারপিগমেন্টেশন কোন ক্ষত হওয়ার পর যেমন কালশিটে পড়া, পড়ে যাওয়া অথবা রাসায়নিক কোন পদার্থ দিয়ে ত্বকের চিকিৎসার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দিতে পারে।
স্কিনের বড় ধরণের সমস্যা গুলোর মধ্যে পিগমেন্টেশন একটি। কারণ স্কিনে একবার পিগমেন্টেশন হয়ে গেলে তা দূর করতে দীর্ঘদিন সময় লেগে যায়। তাই পিগমেন্টেশন এড়াতে একটি হেলদি লাইফ স্টাইল মেইনটেইন করা অনেক জরুরী। ডেইলি রুটিনে রাখতে হবে প্রচুর পরিমাণে পানি, শাক-সবজি ও ফলমূল। পিগমেন্টেশন হয়ে যাওয়ার পর তার চিকিৎসা করার চেয়ে, আগে থেকে পিগমেন্টেশনের কারণ গুলো বুঝে নিজের স্কিনকে সেইফ রাখার চেস্টা করুন।
স্কিনকে হেলদি এন্ড ব্রাইট করতে অথেনটিক সব প্রোডাক্ট পেতে ভিজিট করুন আমাদের শপ এ।
লিখেছেন আফরোজ জান্নাত হৃদিতা