অফিস কে বলা যায় চাকুরীজীবীদের সেকেন্ড হোম। কারণ এই অফিসেই কাটে তাদের দিনের অনেকটা সময়। আর এই সময়টাকে প্রপারলি ইউটিলাইজ করতে পারলে গড়ে উঠে একটি সফল ক্যারিয়ার। অনেকের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা কাজ করে, যে অফিসে তাদের একমাত্র দায়িত্ব শুধু অফিসিয়াল কাজগুলো ঠিকমতো করা। কিন্তু আসলেই কি নিজের কাজটুকু ঠিকঠাক ভাবে করলে সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়?
প্রতিটি অফিসের এনভায়রনমেন্ট অনুযায়ী বেসিক কিছু রুলস ফলো করা প্রত্যেক এমপ্লয়ির রেস্পন্সিবিলিটি।
এক্ষেত্রে দেশে বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চালানো বিশেষ গবেষনায় জানা গেছে “কি করা উচিৎ” থেকে “কি করা উচিৎ না”বিষয়গুলোতে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। কিছু বিষয় আছে, যা খুব বেসিক এবং এমপ্লয়িরা অফিসে সচরাচর এই ভুল গুলোই করে থাকে।
আজকের ব্লগে গবেষণার এই পয়েন্টগুলো নিয়ে আলোচনা করছি।
১। ড্রামাটিক ও প্রবলেমেটিক পার্সোনাল ফোন কল রিসিভ
অফিসে প্রবলেমেটিক ফোন কল আসবেই কিন্তু এ সকল প্রবলেম আপনাকে এমন একটি জায়গায় বসে সলভ করতে হবে যেখানে অন্য কেউ আপনাকে শুনছে না। দরকার হলে ছোট একটি ব্রেক নিয়ে প্রাইভেট কোন জায়গায় চলে যান এবং সবথেকে ভালো হয়, অফিস টাইম এর পর বাসায় গিয়ে প্রবলেম গুলোর সলিউশন করুন।
২। অফেন্সিভ ইমেইল
আপনার কাছে অফেন্সিভ মনে হয় এরকম কোন ইমেইল কাউকে পাঠাবেন না। কারণ ভুল ব্যক্তির হাতে পড়লে তা কোম্পানির রেপুটেশন ও আপনার নিজের রিপুটেশন নষ্টের কারণ হতে পারে। এমনকি নিজের পার্সোনাল ইমেইল যা কোম্পানির ওয়াই-ফাই এ চলে সেটিও আপনার পার্সোনাল না, এটা সব সময় মাথায় রাখতে হবে।
৩। কলিগদের নিয়ে গসিপ করা
কারো সম্পর্কে কোন খারাপ তথ্য ছড়ানোর আগে এটা মাথায় রাখতে হবে, আপনি সেই ব্যক্তিকে যতটা না ছোট করছেন তার থেকে বেশি ছোট করছেন নিজেকে।
৪। সোশ্যাল মিডিয়ায় টাইম স্পেন্ড
কোম্পানি আপনাকে প্রোডাক্টটিভ হওয়ার জন্য টাকা দেয়, আপনার স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় আড্ডা দেয়ার জন্য না। আপনার কাজের অংশ না হলে সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিটি লাঞ্চ টাইম অথবা ব্রেক টাইমের জন্য রিজার্ভ করে রাখুন। পার্সোনাল কাজে কোম্পানির কম্পিউটার ব্যবহার না করে নিজের ফোন ব্যবহার করুন।
৫। নিজের সম্পর্কে পজিটিভ ইম্প্রেশন আনতে মিথ্যা বলা
মনে রাখতে হবে কোন এক সময় সত্য সামনে আসবেই। প্রযুক্তি যেমন আপনার প্রশংসা পত্রকে অতিরঞ্জিত করতে সাহায্য করে, প্রযুক্তি তেমনি সত্যকে সামনে আনতেও সাহায্য করে। ছোট ছোট মিথ্যাও আপনাকে বড় কোন ভাবে আঘাত করতে পারে।
৬। অসুস্থ অবস্থায় অফিসে আসা
জবের প্রতি আপনার কমিটমেন্ট অবশ্যই জোরদার হতে হবে কিন্তু তাই বলে এই না যে আপনি নিজেকে ভালো একজন কর্মী দেখাতে জ্বর বা অন্য কোন ভাইরাস নিয়ে অফিসে এসে একটা হেলদি এনভায়রনমেন্টকে আনহেলদি করে তুলবেন। অসুস্থ অবস্থায় সম্ভব হলে বাসা থেকে কাজ করুন।
৭। অফিসে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো
অফিসে বস অথবা এমপ্লয়িদের সাথে প্রেম, নাটক সিনেমায় দেখা গেলেও বাস্তবে এটি অ্যাপ্রিশিয়েট করার মত কোন বিষয় না। এটা অফিসে একটা বিরক্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আপনি যদি লাইফ পার্টনার হিসেবে কাউকে খুঁজতে চান তবে অফিসে না ডেটিং সাইটগুলো ট্রাই করুন।
৮। রেগে গিয়ে উত্তর দেয়া
রাগ আপনার শরীরের জন্য সব থেকে বেশি ক্ষতিকর। অফিসের কোন বিষয়ে আপনার রাগ হতেই পারে কিন্তু এক্ষেত্রে নিজেকে কিছুটা সময় দিতে হবে এবং রাগকে কন্ট্রোল করতে হবে যেন আপনি অফিসে প্রফেশনাল ওয়েতে এ্যাক্ট করতে পারেন।
৯। ইন্টারাপ্ট
কোন ব্যক্তির সাথে কথা বলার সময় যদি তাকে কথায় কথায় বাধা দেয়া হয়, সে কেবল বিরক্তই হবে না বরং অপর ব্যক্তি সম্পর্কে তার একটি নেতিবাচক ধারণাও তৈরি হবে। সামনের ব্যক্তির কথা শুনতে শিখুন, তবেই আপনি প্রশংসা এবং সম্মান পাবেন।
১০। ওভার ফ্রেন্ডলি বা ক্যাজুয়াল হওয়া
অফিসে এমপ্লয়িরা এখন আর ফরমাল পোশাক পড়ে না এবং তাদের কথোপকথন অনেক বেশি ক্যাজুয়াল হয়। তার মানে এই নয় যে অফিসে ঘরের কাপড় পড়া এবং গালিগালাজ করা গ্রহণযোগ্য আচরণ। আপনার চেহারা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং কর্মে আপনি যে ছাপ তৈরি করছেন সে বিষয়ে খেয়াল করুন। এটা মনে করবেন না যে আপনার পারফরম্যান্স, আপনার দ্বারা সৃষ্ট ঝামেলা ও বিরক্তি কে ছাপিয়ে যাবে।
১১। মাতাল হয়ে অফিসে আসা
অফিসে আসার আগে অথবা আগের রাতে নেশাদ্রব্য গ্রহণের থেকে আনপ্রফেশনাল আর কিছু হতে পারে না। আপনি যদি কোন প্রকার নেশায় আসক্ত হয়ে থাকেন তবে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
১২। স্ট্রং স্মেল এর পারফিউম ব্যবহার
একটি বদ্ধ পরিবেশে তৈরি হওয়া স্মেল কারো কারো জন্য বিরক্তির কারণ হতে পারে। সবার জন্য পরিবেশকে সতেজ ও নিউট্রাল রাখুন।
১৩। হেডফোন ছাড়া কম্পিউটারে যে কোন প্রকার মিউজিক চালানো
কর্মক্ষেত্র চিন্তা ভাবনার জন্য পরিকল্পিত একটি পরিবেশ। আপনার বিড়ালের ভিডিও বা ইলেকট্রনিক্সের আওয়াজ আপনাকে আরো ভালো চিন্তা করতে সাহায্য করতে পারে কিন্তু একটি বদ্ধ পরিবেশে এটি আপনার কলিগদের জন্য বিরক্তির কারণ হতে পারে। তাই সবার কথা চিন্তা করে একটি শান্ত পরিবেশ বজায় রাখুন।
১৪। কাজের সময় সহকর্মীদের বিরক্ত করা
আপনি আপনার গোল অ্যাচিভ করতে ডেডিকেটেড না তার মানে এই না যে আপনার সহকর্মীরাও আপনার মত। অনেক মানুষ আছে তারা কানে হেডফোন দিয়ে রাখে শুধুমাত্র এই কারণে যেন কেউ তাদেরকে তাদের কাজের সময় বিরক্ত না করে। তাদের স্পেস দিন, দরকার হলে তাদেরকে একটি ইমেইল পাঠিয়ে রাখুন অথবা তাদের হেডফোন খোলা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
১৫। ওভেনে দুর্গন্ধযুক্ত খাবার গরম করা
অফিসের রান্নাঘর কে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করতে হবে। মাছ জাতীয় খাবার অফিসের ওভেনে গরম করলে তা দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে। এধরণের খাবার রাতের জন্য তুলে রাখুন।
১৬। ফোন লাউডে রাখা
অফিসে ফোন লাউডে দিয়ে রাখার থেকে বিরক্তিকর আর কিছু নেই। যদি আপনার জরুরি কোন ফোন কল আসার থাকে তবে ফোন ভাইব্রেট করে পকেটে রাখুন অথবা সাইলেন্ট করে ডেস্কে এমন জায়গায় রাখুন যেখানে আপনি ফোন দেখতে পারছেন।
১৭। ধার
কলিগদের থেকে টাকা ধার নেয়া কিছু এমপ্লয়ির অভ্যাসে পরিণত হতে দেখা যায়। আপনার কোম্পানি আপনাকে বেতন দেয়, আপনার কাজের জন্য পর্যাপ্ত সম্মানী দেয়। বেতন যদি আপনার জন্য যথেষ্ট না হয় তবে আপনার বসের সাথে এ বিষয়ে কথা বলুন।
১৮। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অফিসে ফোকাস করা
আপনি মানুষ এবং আপনার ফিলিংস আছে কিন্তু এই ফিলিংস গুলো আপনি কোথায় এক্সপ্রেস করবেন সেটা জানা জরুরি। সবাই আপনার পার্সোনাল লাইফ এর প্রবলেম সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক নয়। সিরিয়াস কোন ফ্যামিলি প্রবলেম হলে আপনি বসকে জানাতে পারেন। অন্যথায় ব্যক্তিগত জীবনকে অফিসের কাজে বাধা দিতে দেবেন না।
১৯। নিজেকে আলাদা করে রাখা
এমন অনেক মানুষ থাকে যারা কারো সাথে ইন্টারেকশন করতে পারেনা এবং নিজেকে আইসোলেট করে রাখে। মানুষের সাথে কমিউনিকেট করা জরুরি যেন সকলে আপনাকে একজন কন্ট্রিবিউটর হিসেবে বুঝতে পারে।
২০। স্পর্শকাতর তথ্য শেয়ার করা
সকলের ব্যক্তিগত তথ্য সম্মান করা উচিত। যদি আপনি তথ্যের সংবেদনশীল প্রকৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট না হন তবে গোপনীয়তার দিক থেকে তা এড়িয়ে চলুন। এতে আপনি নিরাপদ অবস্থানে থাকবেন।
২১। ষড়যন্ত্র তৈরি করা
আপনি যখন অফিসের একটি সুন্দর পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটান, তখন আপনি নিজের দুর্বল মানসিকতাই প্রকাশ করেন। দলের মধ্যে সমস্যা তৈরি না করে সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করুন।
২২। ইমম্যাচিউর বিহেভ করা
অফিসের অনেক কিছুই আপনার জন্য হতাশাজনক হতে পারে, তবে সেজন্য আপনি শিশুর মত আচরণ করতে পারেন না। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মত আচরণ করুন এবং সমস্যা সমাধানের জন্য শান্ত ও যুক্তিবাদী হন।
২৩। নিজেকে সবসময় সঠিক মনে করা
অনেকেই সব সময় একটি ধারণা পোষণ করে যে তারা ঠিক। আর এই ধারণাই তাদের মনে অহংকার সৃষ্টির কারণ যা একটি টিমের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
২৪। অফিসিয়াল টাইম ওয়েস্ট করা
অফিসিয়াল টাইমে অনেককে গল্প গুজব করে সময় নষ্ট করতে দেখা যায়। অফিসের টাইমটা অফিসিয়াল কাজে ব্যবহার করতে শিখুন।
আজ একটা ভিন্নধর্মী টপিক নিয়ে ব্লগ লিখলাম। বিষয়টা অনেক ইম্পরটেন্ট হওয়ার পরও এটা নিয়ে আলোচনা বা লেখালিখি খুব কমই হয়। অফিসে কাজের পরিবেশ বজায় রাখতে এবং কোম্পানির উন্নয়নের স্বার্থে বেসিক অফিস ম্যানারগুলো মেনে চলা সকল এমপ্লয়িদের প্রধান দায়িত্ব গুলোর একটি। নিজেদের একজন ভালো কর্মী এবং সেই সাথে একজন ভালো ও সচেতন মানুষ হিসেবে প্রকাশ করার রেস্পন্সিবিলিটি আমাদের, অন্য কারো নয়। তাই এই বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেয়া বিশেষ জরুরি।