‘নিম’, একনি- পিম্পেল রোধে এক অনন্য উপাদান
১৭ বছরের মিতু। নিজের স্কিন নিয়ে সবসময় তার একটাই কমপ্লেইন, একনি ও পিম্পেল। এদিকে বয়স কম হওয়ায় সে চাইলেও সব ধরণের স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহার করতে পারছেনা। তাই দেখা যায় প্রায় সময়ই তাকে এই একনি- পিম্পেল নিয়ে টেনশনে থাকতে হয়।
মিতুর মত এই সমস্যা অনেকেরই। যারা সারা বছরই কম বেশি একনির সমস্যায় সাফার করে তাদের জন্য সামার মানে আরো বেশি স্কিন প্রবলেম। গ্রীষ্মকালে উচ্চ তাপমাত্রা আর হিউমিডিটির প্রভাবে ঘাম যেমন বেড়ে যায় তেমনি ত্বকের তেল গ্রন্থি থেকে তেল নিঃসরণও অনেক বেশি বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক ভাবে একনির সমস্যা প্রকট হয়ে উঠে। তবে এই গরমেও ত্বককে একনিমুক্ত রাখা কঠিন কোন কাজ নয়। রোজকার স্কিন কেয়ার রুটিনে কয়েকটি উপকারি জিনিস এ্যাড করলে খুব সহজেই হয়ে যায় এই পিম্পেলের সমস্যার সমাধান।
আজকের ব্লগে আলোচনা করবো এমনই একটি কার্যকরী উপাদান নিম এর কথা, যাকে একনি-পিম্পেল রোধে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা যায়।
নিমের আছে শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যা ব্রণ-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং মুখে ব্রণ হতে বাধা দেয়। এছাড়া আমরা জানি অয়েলি স্কিনে একনি প্রবলেম হয় সবথেকে বেশি। নিমে থাকা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড স্কিনের এক্সেস অয়েল প্রডাকশন রোধ করে, স্কিনে অয়েলের ভারসাম্য বজায় রাখে।
নিমের সাথে আরও কিছু ইফেক্টিভ ইনগ্রিডিয়েন্ট এ্যাড করে বানানো যায় কিছু এন্টি-পিম্পেল ফেসপ্যাক । এই ফেসপ্যাক গুলোর যেকোন একটি সপ্তাহে দু বার মুখে লাগালে কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যায়।
১। নিম, হলুদ এবং টি ট্রি অয়েল এর ফেস মাস্ক
একনে-প্রন স্কিনের জন্য এই মাস্কটি হতে পারে একটি পাওয়ার প্যাকড সমাধান। নিম ও হলুদ দুটি উপাদানই অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল এজেন্ট। আর টি ট্রি অয়েলে আছে অ্যাান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যাান্টি-মাইক্রোবায়াল উপাদান যা ত্বকের জন্য অনেক বেশি উপকারি।
প্যাক তৈরির নিয়ম
১ টেবিল চামচ নিম পেস্ট, ১ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল, ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া একসাথে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। ফেস এ যেখানে যেখানে পিম্পেল আছে সেখানে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২। নিম, মুলতানি মাটি ও দই এর ফেসপ্যাক
নিম এর সাথে মুলতানি মাটি ও দই একসাথে মিলিয়ে তৈরি করা যায় একটি শক্তিশালী এন্টি-একনি প্যাক। স্কিনের অতিরিক্ত সেবাম শোষণ করতে মুলতানি মাটি অনেক উপকারী।
প্যাক তৈরির নিয়ম
২ টেবিল চামচ নিম পেস্ট, ১ টেবিল চামচ দই, ১ চা চামচ মুলতানি মাটি, আধা চা চামচ গোলাপ জল একসাথে ভালোভাবে মিলিয়ে পুরো ফেসে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৩। নিম, মধু এবং দুধের প্যাক
এই মাস্কটি ব্রণ দূর করতে এবং স্কিনের জালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা মধু ও দুধ স্কিনকে ময়েশ্চারাইজ ও উজ্জ্বল করে।
প্যাক তৈরির নিয়ম
২ টেবিল চামচ নিম পেস্ট, ১ চা চামচ মধু, ১ থেকে ২ চা চামচ দুধ একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। মুখে লাগিয়ে শুঁকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৪। নিম ও তুলসির প্যাক
নিম এবং তুলসির অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য থাকায় তা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। এই দুটি উপাদানই ব্রণ দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকরী। প্যাকটি স্কিনের পিম্পেল এর সাথে ডার্ক স্পট দূর করতেও অনেকটা হেল্পফুল।
প্যাক তৈরির নিয়ম
নিম ও তুলসি পাতা রোদে শুঁকিয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে। এরপর দুটো উপাদানই ১ চা চামচ করে নিয়ে তাতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
আরো ভালো ফলাফলের জন্য ১ চা চামচ চন্দন গুঁড়ো বা ১ চা চামচ মুলতানি মাটি এ্যাড করতে পারেন।
৫। নিম, বেসন ও গোলাপ জলের ফেসপ্যাক
নিমের সাথে বেসন ও গোলাপ জল মিশিয়ে একটি শক্তিশালী ফেসপ্যাক বানানো যায়। আমাদের ত্বকে জমে থাকা ধুলো-বালি-ময়লার কারণে ব্রণের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। বেসন স্কিনকে ভিতর থেকে গভীরভাবে পরিষ্কার করে, ব্রণের সমস্যা দূর করে। অপর দিকে গোলাপ জল স্কিনকে ঠাণ্ডা ও হাইড্রেট রাখে। এর প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি ব্রণ কমাতে হেল্প করে।
প্যাক তৈরির নিয়ম
১ চামচ নিমের গুঁড়ো, ১ চামচ বেসন ও ২ চামচ গোলাপ জল একসাথে মিশিয়ে নিন। ভালোভাবে পুরো ফেস এ লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
একনি নিয়ে আমাদের ভোগান্তি নতুন কিছু না। বয়সন্ধিকাল থেকে শুরু হওয়া এই সমস্যার যেন কোন শেষ নেই। তবে সঠিক নিয়ম মেনে স্কিনের টেক কেয়ার করলে এই প্রবলেম অনেকটা মিনিমাইজ করা যায়। নিমের প্যাক অথবা নিম এক্সট্রাক্ট সমৃদ্ধ ফেসওয়াশ রেগুলার বেসিসে ব্যবহার করে নিজের স্কিনকে রাখুন একনি ও পিম্পেল ফ্রী।
নিম ফেসওয়াশসহ স্কিনকে হেলদি ও গ্লোয়িং রাখতে, অথেনটিক সব প্রডাক্ট কিনতে ভিজিট করুন আমাদের শপ এ।
লিখেছেন আফরোজ জান্নাত